August 18, 2025, 12:51 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
কুষ্টিয়ায় কারাগারে হাজতির মৃত্যু কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াইয়ে পানি কমলেও দৌলতপুরে অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি কুষ্টিয়া শাহিন ক্যাডেট স্কুল/ ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার কুষ্টিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল রেসিং খেলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই কিশোরের মৃত্যু ঝিনাইদহে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে ১৭ জন আটক রাজশাহীতে একই পরিবারের চারজনের রহস্যজনক মৃত্যু র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেপ্তার ইসরায়েলের জন্য লুকিয়ে অস্ত্র আনছিল সৌদি জাহাজ, ইতালিতে আটক ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানিতে বড় ধাক্কা ধানসহ কয়েকটি খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ডের পথে বিশ্ব

লালন স্মরণ উৎসব

নিজস্ব প্রতিনিধি: উপমহাদেশের কিংবদন্তি সাধক বাউল সাধক ফকির লালন শাহের মাজারে রবিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘দোল পূর্ণিমা’ উৎসব। উৎসবটির দিন-কাল কারো জানা না থাকলেও জনশ্রæতি রয়েছে যে লালন নিজেই তাঁর জীবদ্দশায় প্রত্যেক পূর্ণ-চন্দ্র তিথিতে এই উৎসব করতেন। এই উৎসবে দুর দুরান্ত থেকে তাঁর শিষ্যগণ অংশ নিতেন। সেই থেকেই উৎসবটির চল এবং বাউল বিশেষজ্ঞগন বলছেন প্রায় দুশ বছর হবে এই উৎসবের বয়স। তাঁর শিষ্যরা এই উৎসবকে লালন স্মরণোৎসব’ও বলে থাকেন।

উৎসবটির কাল পূর্ণ চন্দ্রের দেড় দিন। পূর্ণ তিথির সন্ধ্যালগ্নে ‘রাখল সেবা’র মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল উৎসব। তবে আক্ষরিকার্থে উৎসবটি দেড় দিনের হলেও চলে তিনদিন। এ হিসেবে রবিবার সন্্যদায় শুরু হয়ে চলবে সোমবার বিকেলে ‘অষ্টপ্রহর সাধুসংঘ’ বা ‘পুণ্যসেবা’ গ্রহণ পর্যন্ত।

এদিকে দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে লালনের আঁখড়াবাড়ি চত্বর এখন উৎসব মুখর। দেশী-বিদেশী অনেক লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটেছে ইতোমধ্যে। তাদের পদচারনায় মুখর এখন বাউল আখরাটি। অসংখ্য বাউল পূর্ণিমার সন্ধ্যার আগেই লালনের আঁখড়াবাড়িতে নিজ নিজ আসনে বসেছেন। ‘আসনে’ বসা সাধু-গুরুদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভক্তি-শ্রদ্ধার বিষয়। যার যেমন সামর্থ্য, কেউ সাদা বা রঙিন কাপড়ের টুকরোর ওপর, কিংবা শিতল পাতার মাদুর, এমনকি গামছা বিছিয়েও আসনে বসে থাকেন।

প্রতি সন্ধ্যাতেই স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা যাতে অংশ নেন লালন বিশেষজ্ঞসহ অনেকে আর তারপরই রাতভর চলে লালনের গান। বসেছে জমজমাট লোকশিল্প মেলা। তিনদিনের এই মেলায় অংম নিয়ে থাকেন প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।

বাউল সঙ্গীতে লালনের সমকক্ষ নাম বিরল। তাঁর গানেও বিকল্প কোন নাম পাওয়া যায় না। গানই ছিল তাঁর দর্শন। এই গানের মধ্য দিয়েই তিনি সাধক, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক। এই গানের মধ্য দিয়ে কেবল আধ্যাত্ম দর্শনই নয়, বাংলার সমাজ, প্রকৃতি ও মানুষের কথাও প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ প্রভৃতি নামে অভিহিত।

লালনের আধ্যাত্ম চেতনা ছিল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে উর্ধ্বে। সেখানে ছিল মানবপ্রেম ও মানবতা। যার মুল সুর ছিল অসা¤প্রদায়িকতা। তিনি নিজেও তার জাত-ধর্ম সম্পর্কে নিস্পৃহ ও উদাসীন ছিলেন। তিনি কখনও এ বিষয়ে নিজে কিছু বলেন নি। লালনের জীবন-কাহিনী অনেকাংশেই রহস্যাবৃত। তাঁর মৃত্যুর পর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত অমর কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন সম্পাদিত পাক্ষিক ‘হিতকরী পত্রিকা’র সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, “ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশত কিছুই বলিতে পারে না। তথাপি কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্যতিরেকেই একটি সূত্রে তাকে হিন্দু কায়স্থ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও লালন হিন্দু না মুসলমান এই কৌতূহল ও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে জীবদ্দশায়।”

লালনের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। নিজ সাধনাবলে তিনি হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন।

লালন কুষ্টিয়া শহরের কালীগঙ্গা নদীর তীরে ছেঁউড়িয়া গ্রামে এসে বাংলা ১৮২৩ সাল মতান্তরে ১৮৩০ সাল নাগাদ আঁখড়া স্থাপন করেন। অল্প দিনের মধ্যেই লালনের প্রভাব ও পরিচিতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। জীবদ্দশায় লালনের একটি স্কেচ তৈরি করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। লালনের মৃত্যুর বছরখানেক আগে ৫ মে ১৮৮৯ সালে পদ্মায় তার বোটে বসিয়ে তিনি এই পেন্সিল স্কেচটি করেন। যা ভারতীয় জাদুঘরের সংরক্ষিত রয়েছে। যদিও কেউ কেউ দাবি করেন, স্কেচটিতে লালনের আসল চেহারা ফুটে ওঠেনি।

১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর (বাংলা ১২৯৭ সালের ১ কার্তিক) শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় ১১৬ বছর বয়সে লালন শাহ দেহত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শিষ্য-ভক্ত পরিবেষ্টিত থেকে গানবাজনা করেন। এরপর ভক্ত-শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি চলিলাম’। লালনের ইচ্ছা না থাকায় তার মৃত্যুর পর হিন্দু বা মুসলমান কোন ধর্মীয় রীতিই পালন করা হয়নি। তারই ইচ্ছে অনুসারে আখড়ার একটি ঘরের ভেতর তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

মৃত্যুর ১২ দিন পর হিতকরী পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রচনায় সর্বপ্রথম তাঁকে ‘মহাত্মা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। লালন আজ নেই। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর অমর সৃষ্টি। যার মধ্য দিয়ে তিনি বেঁচে আছেন এবং বেঁচে থাকবেন বাঙালীর মরমী মানসপটে।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে তিনদিনব্যাপী এ স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। অনুষ্ঠানে অতিথি থাকছেন আঃ কাঃ মঃ সরওয়ার জাহান এমপি, সেলিম আলতাফ জর্জ এমপি, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত প্রমুখ।

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত জানান, উৎসবকে কেন্দ্র করে এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net